হাকালুকি হাওরে ধান কাটার ধুম
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওরে বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরের বুকের সোনালী ফসল তুলতে প্রচন্ড খরতাপে কৃষকরা মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন। তবে অনেক জায়গায় অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির শঙ্কায় কৃষকরা আধা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন। হাওরে পানি ঢোকার আগেই ফসল ঘরে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।হাকালুকি হাওরপাড়ের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। হাওরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা । এ বছর হাওরে এখন পর্যন্ত পানি না আসায় সময়মতো নিরাপদে ধান কাটছেন কৃষকরা।
হাকালুকি হাওরপাড়ের ভুকশিমইল, কানেহাত, কারেরা, বাদে ভুকশিমইল এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রচন্ড রোদে উত্তপ্ত আবহাওয়ায় কৃষকরা হাওরের ভেতর থেকে ধান কেটে নিয়ে আসছেন। অনেক মৌসুমী শ্রমিক ধান কাটতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাওরে এসেছেন। শ্রমিকরা জানান, এবছর আবহাওয়া অতিরিক্ত উত্তপ্ত থাকায় ধান কাটা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ধান মাড়াই করে ঘরে তুলা পর্যন্ত অনেকটা বেগ পেতে হবে । হাওরে সরাসরি সুর্যের তাপের মধ্যে ধান কাটার সময় বার বার গলা শুকিয়ে প্রচন্ড পানির পিপাসা তৈরি হয়ে শরির থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয় বলে জানান কৃষকরা।হাওরপাড়ের কৃষক সালেহ আহমদ বলেন, 'ধান পাকার আগে অতি বৃষ্টি হলে খুবই সমস্যায় পড়তে হয় । হাওরে উজানের পানি ঢুকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। হাওরে এখন পানি না থাকায় ফসল তুলতে সুবিধা হচ্ছে।' আরেক কৃষক রুহিন মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে ধান পাকতে শুরু করলে বৃষ্টি হওয়ায় খেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় ছিলাম । এখন অতিরিক্ত গরম থাকলেও ধান নিরাপদে কাটা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতি বছরই বোরো আবাদে বেশ ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। গেল বছর খরায় বোরো ধান আবাদ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পানির সংকটে পড়ায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা আরও জানান,বোরো চাষের এলাকায় গভীর নলকূপের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পানি সংকটের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।গত বছর হাকালুকি হাওরে যে ছোট বড় খাল রয়েছে সেগুলি শুকিয়ে গিয়েছিল। আবাদি জমির পরিমান বেশি হওয়ায় তুলনামূলক পানির জোগান না থাকায় দেখা দিয়েছিল পানির অতিরিক্ত সংকট। কোনো কোনো জায়গায় ধান বের হলেও পানির অভাবে ধানের চারা শোচনীয় অবস্থায় দেখা গিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরো চাষের এলাকায় খরার সময় হিটশকের মাত্রা ধরা হয়েছিল। আক্রান্ত এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। ফ্লাওয়ারিং স্টেজের সময় অতিরিক্ত গরম বাতাস থাকায় ধানের শীষ থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ায় চারা থেকে ধান বের হয়নি। সব শঙ্কা কাটিয়ে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরাও ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৬ শত ৬০ হেক্টর। কুলাউড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসে হাওর অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরো উপজেলার ধান কাটা শেষ হবে এবছর বোরো ধানের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য সরকারি ভর্তুকি মূল্যে কয়েকটি কম্বাইন্ড হারভেস্টর কৃষকদের দেওয়া হয়েছে।
সালা উদ্দিন,কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিবেদক