রাণী এলিজাবেথ কর্তৃক এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদ মিয়া
ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ কর্তৃক এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদ মিয়া । লন্ডন বারা অফ টাওয়ার হ্যামলেটসে দীর্ঘ দিন কমিউনিটি সেবা প্রদানের পুরস্কার হিসেবে রাণীর সম্মান সূচক মেম্বার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার বা এমবিই খেতাব পান কমিউনিটির গুণী এই ব্যক্তি।
আলহাজ্ব সাজ্জাদ মিয়া ব্রিটেনে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ত্ব। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে ১৯৫৪ সালে সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর পর বিলেত পাড়ি জমান ১৯৬৭ ইংরেজিতে। যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর থেকে আজ পর্যন্ত কমিউনিটির কাজে নিজেকে উৎসর্গ করে রেখেছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু হয় বার্মিংহামে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। সাত সমুদ্র তের নদী পাড় করে প্রবাস জীবন গ্রহন করেও দেশের কথা ভুলে যাননি তিনি। ১৯৭১ সালে বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে চলে আসেন। তরুন এই ব্যক্তি প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের আন্দোলনের প্রায় প্রতিটি মিটিং এবং মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিয়ত দেশের খোঁজ খবর রাখেন। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভুমিকা রাখেন।
ব্রিটেনে আজকের ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের গৌরব গাথা, অর্জন দৃশ্যমান। তবে অতীত এ রকম ছিল না, ছিল সংগ্রামের, লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হত। কারণ বর্ণ বৈষম্য ছিল তুংগে। আর তাই ১৯৭৬ সালে প্রতিস্টিত হয় বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশন। বর্নবাদ বিরোধী আন্দোলন তরান্বিত করে এই সংগঠন। আজকের প্রবীন সাজ্জাদ মিয়া ছিলেন তখনকার উদ্যমী তরুন। তারুণ্যের প্রতীক নিয়ে নিজে হাল ধরেছেন সংগঠনের ট্রেজারার হিসেবে। এরপর জেনারেল সেক্রেটারি, সর্বোচ্চ পদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কমিউনিটির সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
ব্রিটেনে বাংলাদেশী মুসলমানদের অন্যতম অর্জন ঐতিহাসিক ব্রিকলেন জামে মসজিদ। খৃস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের চার্চ, ইহুদিদের সিনাগগের পর আল্লাহর ঘর মসজিদ স্থাপিত হয়। পূর্বে লন্ডন জামে মসজিদ ট্রাস্ট যা বর্তমান নাম হচ্ছে ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্ট। ১৯৮০ সালে এর সদস্যপদ গ্রহন করেন সাজ্জাদ মিয়া। দীর্ঘ দিন মসজিদের সেবার মাধ্যমে ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সততা, নিস্টা আর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন আলহাজ্ব সাজ্জাদ মিয়া তার বিচক্ষণতার আলোকে সফলভাবে দায়িত্ব এখনো পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের যারা এখন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের ঘরে ঘরে, এখন শিক্ষিত নব প্রজন্ম থাকলেও আজ থেকে ৪ যুগ আগে এ দৃশ্য কেমন ছিল তার সাক্ষী সাজাদ মিয়ার মত প্রবীন ব্যক্তিরা। দেশ থেকে আসা বাংলাদেশীদের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করার লক্ষে প্রতিস্টিত হয়েছে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের মতো সেবা প্রদানকারী সংগঠন। বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ১৯৮২ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হন। আস্থার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা প্রসারেও তার অবদান লক্ষণীয়। ১৯৮৪ সালে থমাস বাক্সটন প্রাইমারি স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বর্তমানে চেয়ার অফ গভর্নর হিসেবেও গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৮ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ল সেন্টারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিটিশ রাজনীতিতেও আবদান রাখেন সাজ্জাদ মিয়া। ১৯৯০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ওয়েভার্স ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে কমিউনিটির নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিলে দেশে বিদেশে কমিউনিটির সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৫-২০১৭ সালে জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু করা হয় জিসিএসই ও এ লেভেল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের।
জীবনের প্রথম ধাপ থেকে আজ পর্যন্ত কমিউনিটির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। আর তাই ২০২০ সালে ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ কর্তৃক এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। আর এতে করে কমিউনিটির সেবায় তার পথচলা আরো বেগবান ও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তিনি।সাজ্জাদ মিয়া বলেন, যেখানেই মানুষের সাহায্য প্রয়োজন হয়েছে নিজের সাধ্যমতো চেস্টা করেছি। একা না হলে সংগঠনের মাধ্যমে সংগবদ্ধ হয়ে কাজ করেছি। কোন রেকগনিশনের আশায় করিনি। তবে রাণী কর্তৃক এই মেম্বার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার বা এমবিই খেতাব পাওয়া অনেক আনন্দের। আমি মনে করি আমার এই অর্জন অন্যদের উৎসাহিত করবে।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন মসজিদের প্রেসিডেন্ট, টাওয়ার হ্যামলেটেস প্যারেন্টস সেন্টারের চেয়ারম্যান, থমাস বাক্সটন প্রাইমারি স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যুক্তরাজ্য শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিস্টার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সাজ্জাদ মিয়া।
কমিউনিটির একজন অভিভাবক হিসেবে সাজ্জাদ মিয়া যেমনি সফল। পরিবারের অভিভাবক হিসেবেও তেমনি সফল। সহধর্মিণী হুসনেআরা বেগম, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের পরিবার। ছেলে ব্যাংকার, বড় মেয়ে টাওয়ার হ্যামলেটেস কলেজে কর্মরত, মেজ মেয়ে ব্যারিস্টার, সেজ মেয়ে টিচার আর ছোট মেয়ে ইউসিএলে পিজিসিই নিয়ে পড়াশোনা করছে।
জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কমিউনিটি ও দেশের মানুষের সেবায় আরো কাজ করতে চান সাজ্জাদ মিয়া। ৬৫ বছর বয়সী প্রবীন এই ব্যক্তি নানা শারীরিক রোগে ভুগছেন। তবে তার শারীরিক অসুস্থতা কোন ভাবেই বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি কমিউনিটির কাজ থেকে। সব সময় কমিউনিটির মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় কাজ করে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। আর তাই সবার প্রতি তার আহবান যেন আল্লাহর দরবারে তার সুস্থ্যতার জন্য দোয়া করেন যাতে মানুষের সেবায় আরো বেশী কাজ করে যেতে পারেন।