ইউরোপে তিন বছরে নিখোঁজ ৫০ হাজার অভিবাসী শিশু
ইউরোপে প্রবেশের পর গত তিন বছরে ৫০ হাজারের বেশি অভিভাবকহীন অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ৪৭ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। আন্তর্জাতিক এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়ংকর এই তথ্য।
কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সম্মিলিত উদ্যোগ ‘লস্ট ইন ইউরোপ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইউরোপে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে থাকা অন্তত ৫১ হাজার ৪৩৩ জন সঙ্গীহীন অভিবাসী শিশু ও কিশোর নিখোঁজ হয়েছে।
২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে মাসব্যাপী অনুসন্ধানের পর এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওই গবেষণা দেখানো হয়েছিল, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপে ১৮ হাজারেরও বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়েছিল।
সবশেষ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়েছে ইটালিতে। গত তিন বছরে দেশটিতে ২২ হাজার ৮৯৯ জন শিশু নিখোঁজের তথ্য নিবন্ধিত হয়েছে।
এরপর অস্ট্রিয়ায় ২০ হাজার ৭৭ জন, বেলজিয়ামে ২ হাজার ২৪১ জন, জার্মানিতে ২ হাজার ৫ জন এবং সুইজারল্যান্ডে ১ হাজার ২২৬ জন শিশু নিখোঁজের তথ্য নিবন্ধন করা হয়েছে।
‘লস্ট ইন ইউরোপ’ প্রকল্পের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিখোঁজ অভিবাসী শিশুদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন এবং ইউরোপের কিছু দেশ নিখোঁজ শিশুদের কোনো তথ্য সংগ্রহই করে না।
শিশুদের নিখোঁজ ও শোষণ প্রতিরোধে কাজ করা তৃণমূল সংগঠনের নেটওয়ার্ক মিসিং চিলড্রেন ইউরোপ’র মহাসচিব আহি ইফেন বলেছেন, এই পরিসংখ্যান খুবই ‘উদ্বেগজনক’।
লস্ট ইন ইউরোপের সদস্য ও জার্মান সংবাদমাধ্যম আরবিবি২৪’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টিকে ইউরোপের ‘ভঙ্গুর অভিবাসন ব্যবস্থার’ সঙ্গে মিলিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র কমিশনার ইলফা ইয়োহানসন। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংশ্লিষ্ট শিশুরা মানবপাচারকারীদের শিকার হতে পারে।
মিসিং চিলড্রেন ইউরোপের মতো শিশু সুরক্ষা সংস্থাগুলো বলছে, সঙ্গীহীন অভিবাসী শিশু ও শরণার্থীরা সহজেই প্রভাবিত হওয়ার এবং পাচারকারীদের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
নারী অধিকারকর্মী ইফেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে বলেছেন, ইউরোপে আসা অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে, কখনো তাদের পাসপোর্ট বা প্রিয়জনকে জিম্মি করে রাখার কারণে মানবপাচারকারীদের হাতে শোষণের শিকার হন।
ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য চাইল্ডমুভ প্রজেক্ট’র ২০২২ সালের এক গবষেণায় দেখা গেছে, ইউরোপে পৌঁছাতে গিতে ৮০ শতাংশেরও বেশি শিশু শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়।
‘শিশু সুরক্ষায় সংকট’
লস্ট ইন ইউরোপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসিপিএটি ইউকে’র প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিসিয়া ডুর শিশু সুরক্ষার বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির জন্য কঠোর সীমান্ত নীতি এবং ‘‘শিশুদের জন্য ইউরোপে সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে অভিবাসনের নিরাপদ ও আইনি পথের অভাবকে’ চিহ্নিত করেছেন।
ডুর বলেন, ইইউর নতুন অভিবাসন ও আশ্রয়নীতি অনুসারে যাচাই বাছাইয়ের জন্য শিশুদেরও আটক রাখার বিধান রয়েছে। এতে তারা আরও বেশি ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে পড়বে।
তবে নতুন এই আশ্রয়নীতির সমর্থকেরা আশা করেন, সঙ্গীহীন অভিবাসী শিশুদের নিবন্ধনের জন্য একটি সমন্বিত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা চালু হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নিখোঁজ হওয়ার সমস্যাটি অনেকটা সমাধান হবে।