শ্রীমঙ্গলের আনারস এখন সর্বত্র
![](https://europentv.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/06/27/pic_p.jpg?itok=K8uqz6fY×tamp=1719504987)
পিন্টু দেবনাথ : পর্যটন সমৃদ্ধময় শ্রীমঙ্গল। সকাল বেলা রাস্তা দিয়ে ঠেলাগাড়ী যোগে লাইন ধরে শহরের দিকে আনারস ঢুকছে। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় বাজার থেকে পাইকাররা এসে মৌসুমী ফল আনারস ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন অলিগলি কিংবা প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ হাটবাজার, সর্বত্রই এখন মৌসুমি রসালো ফল আনারসের মৌ মৌ ঘ্রাণ বিরাজ করছে।
এ ছাড়া সারা দিনই দূরের বাগান থেকে জিপ গাড়ি আর পিকআপ ভ্যানবোঝাই করে আড়তদারদের কাছে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু এ ফলটি।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, লেবু ও চায়ের পাশাপাশি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আনারসের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। উপজেলার মোহাজেরাবাদ, বিষামণি, হোসেনাবাদ, বালিশিরা, ডলুছড়া, সাতগাঁও, নন্দরানী, মাইজদিহিসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকার জমিতে প্রতি বছরের মতো আনারসের চাষ হয়েছে ব্যাপক। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। পাশাপাশি আমদানি বেশি হওয়াতে আনারসের দাম সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।
জানা যায়, ষাটের দশক থেকে শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় আনারসের চাষবাদ শুরু হয়। বর্তমানে বিস্তৃত করা হয়েছে রসালো এফলের চাষ। এ অঞ্চলের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় সিজন ছাড়াও সারা বছরজুড়েই আনারসের ফলন হয়। মৌসুমের আনারসের সাইজ অনেক বড় হয়। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা ট্রাক, পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে যান নিজ এলাকায় বিক্রির জন্য।
স্থানীয় আড়তদাররা জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলায় চাষ করা আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে এখন মৌসুমি আনারসের দাম অনেক কম। তারা আরো জানান, মৌসুম ছাড়াও বছরজুড়ে শ্রীমঙ্গলে আনারসের চাষ করা হয়। তবে মৌসুমি আনারসের গঠন অনেক সুন্দর হয়। তাই মৌসুমি আনারস নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছোট-বড় পাইকাররা এসে নিজ এলাকায় পাঠিয়ে থাকেন। এ ছাড়া স্থানীয় গ্রামীণ হাটবাজারগুলোর মৌসুমি বিক্রেতারাও এখন রসালো আনারস নিয়ে যাচ্ছেন তাদের এলাকায়। ফলে উপজেলার সব হাটই ভরপুর এখন আনারসে।
উৎপাদন বেশি ও ফলন ভালো হওয়ায় বাগান মালিকরা এক দিকে খুশি হলেও দামের কারণে কিছুটা অসন্তুষ্ট তারা। তবে বাগান মালিকরা দাম কিছুটা কম পেলেও স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা ঠিকই চড়া দামে বিক্রি করছেন বলে ক্রেতারা জানান। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন আনারস হচ্ছে কাঁচামাল, এখন গরমের সময়, তাই ফলটি বেশি সময় রাখা যায় না। অনেক আনারস পচে যায় এতে তাদের অনেক লস দিতে হয়।
বিক্রেতারা আরো জানান, এবার আনারসের দাম বেশি নয়, কমই। বড় সাইজের আনারস ১২০-১৪০/১৫০ টাকার মধ্যেই হালি বিক্রি করা হয়। তা ছাড়া মাঝারি সাইজের আনারস ৮০-১০০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাইজ বুঝে ৪০-৬০-৭০ টাকায় এক হালি আনারস বিক্রি করা হচ্ছে।
বেশির ভাগ ঠেলার ড্রাইভাররাই আনারস দরদাম করে বিক্রি করে থাকলেও অনেক বাগান মালিককেও দেখা গেছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারদের সাথে দরদাম করতে। এ সময় বিক্রেতারা জানান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন্ উপজেলাসহ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পাইকাররা আসেন আনারস ক্রয় করতে।
প্রতিদিন খুচরা পাইকারি মিলিয়ে কয়েক হাজার আনারস বিক্রি করে থাকেন। এখানে পর্যটকরা হচ্ছেন তাদের মূল ক্রেতা। এ ছাড়া স্থানীয়রাও তার কাছ থেকে আনারস নিয়ে থাকেন।
শ্রীমঙ্গল নতুনবাজারের আড়তদাররা জানান, শ্রীমঙ্গলে ৩০০-৪০০ পাইকার রয়েছেন আড়তদারদের তালিকাভুক্ত। মূলত চাষিদের কাছ থেকে আড়তদাররাই নিলামের মাধ্যমে আনারসগুলো নির্ধারিত দামে এ পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন তারা। একঠেলা আনারস বিক্রি করে দিলে তাদের ১০০ টাকা কমিশন থাকে। এক একটা আড়ত থেকে দৈনিক ১০-২০ হাজার টাকার আনারসসহ কাঁচামাল বিক্রি করে থাকেন বলেও তারা জানান।
উপজেলার বিভিন্ন আনারস চাষি ও ব্যবসায়ীরা আরো জানান, বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি আনারস কেনাবেচা হচ্ছে। গরমের কারণে আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনাবেচা হয়েছে বলেও তারা জানান। পাশাপাশি মৌসুমি ফল সংরক্ষণের জন্য একটি সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানান তারা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় ষাটের দশক থেকে আনারস চাষ শুরু হয়। এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য খুব উপযোগী। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এবার প্রায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এবং কৃষিবিদ সামসুদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, আনারস যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। এই ফলে আছে ম্যাঙ্গানিজ নামক খনিজ উপাদান, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। আছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’-১, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারস থেকে পাওয়া যায় ৫০ কিলো ক্যালরি। দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য এটি অতুলনীয় একটি ফল।
তিনি আরো বলেন, গত মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম।