মহান ওলি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.)
হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি একজন মহান ওলি। তিনি মধ্য এশিয়ার খোরাসানের অন্তর্গত ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলার সঞ্জর নামক গ্রামে ১১৩৮ ইংরেজি ৫৩৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দিন, মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহেনুর। পিতার দিক থেকে তিনি শেরে খোদা হজরত আলি (রা.)-এর চতুর্দশতম এবং মাতার দিক থেকে তিনি হজরত ফাতেমা (রা.)-এর দ্বাদশতম বংশধর। পনেরো বছর বয়সে তাঁর পিতা ও মাতা মৃত্যুবরণ করেন।
হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি প্রথমে তাঁর পিতার কাছ থেকে দীনি শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি সাত কিংবা নয় বছর বয়সে পবিত্র কোরআন তরজমাসহ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল, তাফসির, আরবি, সাহিত্য ব্যাকরণ, মানতিক, হিকমত, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তা ছাড়া তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত হুসামুদ্দীন (রহ.)-এর কাছে দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) ১৫ বছর বয়সে এলমে তাসাওফ-সম্পর্কিত মূল্যবান একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি তাসাওফতত্ত্বে অগাধ জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তারপর তাঁর ওস্তাদ হজরত হুসামুদ্দীন বুখারির নির্দেশক্রমে তিনি হজরত খাজা ওসমান হারুনি (রহ.)-এর কাছে মুরিদ হতে যান। নিশাপুরের কাছে হারুন নামের একটি ছোট শহরে বাস করতেন এই মহাসাধক হজরত ওসমান হারুনি (রহ.)। তিনি ছিলেন শরিফ জিলানির মুরিদ ও প্রধান খলিফা। তাঁর কাছে হিজরি ৫৬০ সালের ১১ শাওয়াল বুধবার জোহরের নামাজের পর খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) মুরিদ হয়েছিলেন। মুরিদ হওয়ার আড়াই বছর পর হজরত ওসমান হারুনি (রহ.) তাঁকে খেলাফত দান করেন। হজরত ওসমান হারুনি তাঁকে চার কোনাবিশিষ্ট একটি টুপি পরিয়ে দেন, টুপিটি তিনি তাঁর পীর শরিফ জিলানির কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) বহু দেশ সফর করেছেন। সফর করার আগে কঠোর ইবাদত-বন্দেগি এবং মুরাকাবা-মুশাহাদা করেছিলেন। তিনি হজ পালন করেন। সফররত অবস্থায় হজরত মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) বহু পীর-ওলির সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এমনকি স্বয়ং গাউসে পাক হজরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর সান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ৫৭ দিন তাঁর সঙ্গে অবস্থান করেন।