কমলগঞ্জ সীমান্তে দিয়ে এবার নারী, শিশুসহ ১৫ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ সীমান্ত এলাকায় বিজিবি পুলিশের সতর্কতা বৃদ্ধি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের দলই সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১৫ জনকে ‘পুশ ইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বুধবার (৭ মে) অবৈধভাবেভাবে বাংলাদেশে পুশ ইন করার কারণে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এখনও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেনি। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৩ টি শিশু রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মৌলভীবাজার জেলার ভারত সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার কনসুর গ্রামের আজিজুল মোল্লার ছেলে মো: রফিকুল ইসলাম(২৫), নড়াগাতী উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের ইনগুল শেখ এর ছেলে তারা শেখ(২৮), কালিয়া উপজেলার জয়পুর গ্রামের মান্নান শেখ এর ছেলে রাজিব শেখ(২৭), নানু মিয়ার মেয়ে শারমিন(২২), রাজিব শেখ এর ছেলে জোবায়ের (০৪), ইয়াসিন (০২), বেন্দাসচর গ্রামের আমজাদ শেখ এর ছেলে হাবিবুর রহমান(৩২), কুনজপুর গ্রামের গিয়াস শেখ এর ছেলে সুমন শেখ(৩০), খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার বালিয়াভাংগা গ্রামের মাবুদ শেখ এর ছেলে তরিকুল শেখ(২৫), মাহাবুর শিকদারের মেয়ে শান্তা(২৪), তরিকুল শেখ এর মেয়ে সুমাইয়া(৮) ও ছেলে মোহাম্মদ শেখ(০৪), নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সাতবাড়ীয়া গ্রামের এরান মোল্লার ছেলে আব্দুল ছাত্তার(২৪), বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার চিরোম্বা গ্রামের জিন্দা শেখ এর মেয়ে হারিনা(২৫), সাহাব উদ্দীনের ছেলে আবু হুরারা (০৭)।
আটককৃত ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পাঁচ বছর ধরে তাঁরা ভারতের আসামে বসবাস করছেন। হঠাৎ ভারতীয় পুলিশ তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার মানিক ভান্ডার এলাকায় নিয়ে এসে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তাঁদের বাড়ি নড়াইল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বলে দাবি করেছেন। আটক ব্যক্তিরা আরও জানান, তাঁদের সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন। এই সংখ্যা তিন শতাধিক হবে। বিএসএফ তাঁদের কয়েকজনকে কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত দিয়ে গেট খুলে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। তবে অন্যদের কোন সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলতে পারেননি।
মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী সদস্য বিনা রানী দেব জানান, আটক লোকদের প্রথমে বিজিবি ক্যাম্প থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তোলার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাঁদের আর থানায় নেওয়া হয়নি।
মাধবপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিব নারায়ন শীল বলেন, বিএসএফ ১৫ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। বিজিবি তাঁদের আটক করে নিয়ে গেছে। এদিকে সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অনেক লোক জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ভোর রাতে কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশ ইন করার অপরাধে শিশু ও নারীসহ ১৫ জনকে আটক করেছিল বিজিবি। এরপর তাদের কমলগঞ্জ থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের গ্রহন করেনি। এ বিষয়টি নিয়ে বুধবার সারাদিন ও রাতে ব্যাপক আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে সিসি ফুটেজে বিজিবির পিকআপে করে আটককৃতদের নিয়ে আসার ভিডিও ক্লিপ প্রচার হয়। এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গলস্থ বিজিবির ৪৬ নং ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার ল্যা. কর্ণেল মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে বারবার চেষ্টা করলে তিনি প্রথমে কথা বলেননি।
শ্রীমঙ্গলস্থ ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলছেন। যাচাই-বাছাই করে তাঁদের বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনার পর মৌলভীবাজার জেলার সব সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি নিজেও এ বিষয়ে সার্বিক নজরধারী করছেন।