গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েছে। বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৪২টি নৌযানের মধ্যে মাত্র একটি তখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাধা এড়িয়ে গাজা অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছিল। অন্য নৌযানগুলোয় থাকা অন্তত ৪৪৩ জন অধিকারকর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। একটি বাদে ফ্লোটিলার সব নৌযান থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলও। নৌযানগুলোতে গাজাবাসীর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী, তাঁবু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিল।গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের হামলার সময় বুধবার আটক করা হয় গ্রেটা থুনবার্গ (মাঝে), থিয়াগো আভিলাসহ (ডানে) অধিকারকর্মীদের
গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক নৃশংসতার মধ্যে ত্রাণবাহী এই নৌবহর আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। গত দুই বছরে উপত্যকাটিতে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের অবরোধে সেখানে দেখা দিয়েছে খাবারের তীব্র সংকট। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার বাসিন্দারা প্রতিদিন প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২৬ শতাংশ খাবার পাচ্ছেন।এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে ভূমধ্যসাগর দিয়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করতে যাচ্ছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। অনেকটা প্রতীকী হলেও ওই বৈশ্বিক প্রচেষ্টা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। চারটি বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা (জিএমটিজি), ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি), মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা ও সুমুদ নুসানতারা। বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম ঢাকায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, তিনি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের মিডিয়া ফ্লোটিয়ায় যোগ দিচ্ছেন। গাজামুখী একটি নৌযান থেকে শহিদুল আলম গতকাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তিনি অসুস্থতা বোধ করার কথা জানান। তিনি বলেন, সমুদ্র খুবই উত্তাল হয়ে আছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুত এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন।
ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযানের আরোহীদের হাত ওপরে দিকে উঠিয়ে রাখতে দেখা যায়গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ছোট ছোট অনেক নৌযান নিয়ে ৩১ সেপ্টেম্বর স্পেন থেকে ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। পরে তিউনিসিয়া, ইতালি ও গ্রিস থেকে বহরে আরও নৌযান যুক্ত হয়। শেষ পর্যন্ত নৌযানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০টির বেশি।সব ঠিকঠাক এগোলে গাজার স্থানীয় সময় গতকাল সকালে নৌবহরটির উপত্যকায় পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লোটিলার। তবে এর আগে বুধবার রাতে নৌবহরে হানা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ভূমধ্যসাগরে গাজা উপকূল থেকে ১২৯ কিলোমিটার (৭০ নটিক্যাল মাইল) দূরে প্রথম ইসরায়েলের বাধার মুখে পড়ে তারা। নৌবহরের নৌযানগুলোকে যাত্রাপথ পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়।গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযান থেকে গ্রেটা থুনবার্গকে নিয়ে যান ইসরায়েলি নিরাপত্তাকর্মীরা
এর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে সেনারা নৌযানগুলোয় একে একে প্রবেশ শুরু করেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযানগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা। সেগুলো লক্ষ্য করে জলকামান দিয়ে ছোড়া হয় পানিও। নৌযানগুলো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা ভিডিওতে অধিকারকর্মীদের দিকে বন্দুক তাগ করে রাখতে দেখা যায় ইসরায়েলি সেনাদের।ফ্লোটিলার নৌযানগুলোয় প্রায় ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ আরোহীর মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিকেরা। নৌযানগুলো থামিয়ে দেওয়ার সময় অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ তাঁদের আটক করা হয়।থুনবার্গকে আটক করা হয় বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার তাঁর একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। আগে ধারণ করা ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করা হয়েছে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী আমাকে নিয়ে গেছে। আমাদের মানবিক যাত্রাটি ছিল অহিংস এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী। সরকারকে আমার ও অন্যদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাতে বলুন।’
রাখা হতে পারে উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে
ইসরায়েলের হানার পর ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়। গতকাল রাতে সেখানে অন্তত তিনটি নৌযান অবস্থান করছিল বলে জাহাজ চলাচলের তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকে দেখা গেছে। এগুলো হলো ক্যাপ্টেন নিকোস, এস্ত্রেইয়া ইমানুয়েল ও আদারা। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন নিকোসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা ছিলেন।
আটক আরোহীদেরও আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছিল ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। থুনবার্গসহ অন্যরা ‘নিরাপদ ও সুস্থ’ আছেন বলে উল্লেখ করে তারা। পরে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ইসরায়েলে ইয়ম কিপুর উৎসব উপলক্ষে ছুটি চলছে। ছুটি শেষে নৌযান থেকে আটক অধিকারকর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
১. গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌযান আটকের পর ইসরায়েলি নৌবাহিনীর একটি নৌযান আশদোদ বন্দরের দিকে এগোচ্ছে। ২ অক্টোবর ২০২৫সে পর্যন্ত অধিকারকর্মীদের দক্ষিণ ইসরায়েলে উচ্চ নিরাপত্তার কোতজিওত কারাগারে রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্যারিসের সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনবিশেষজ্ঞ ওমের শাৎজ। তিনি বলেন, এত অধিকারকর্মীকে অন্যত্র আনা–নেওয়াটা বেশ কঠিন। তাই তাঁদের কোতজিওত কারাগারে রাখা হতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশের জন্য এই কারাগারের কুখ্যাতি রয়েছে।
তবে ফ্লোটিলার আরোহীদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। আর ইসরায়েলি মানবাধিকার গোষ্ঠী ‘আদালাহ’ জানিয়েছে, আগেও গাজার দিকে রওনা দেওয়া বিভিন্ন নৌবহর থেকে অধিকারকর্মীদের আটক করেছিল ইসরায়েল। তাঁদের চেয়ে এবার আটক অধিকারকর্মীদের কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।
আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
ত্রাণবাহী এই নৌবহর আটকে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো দেশের উপকূল থেকে সমুদ্রের গভীরে ২২ কিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ এবং পূর্ণ সার্বভৌমত্ব থাকে ওই দেশের। এরপর আরও ৩৭০ কিলোমিটার এলাকা বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কিছু কার্যক্রম চালাতে পারে ওই দেশ।
এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মাছ ধরা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনের মতো তৎপরতা। সেখানে অন্য দেশের নৌযান ও আকাশযান স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। ১৯৮২ সালের জাতিসংঘের সনদের সমুদ্র আইনে বলা হয়েছে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব দেশের পতাকাবাহী নৌযান স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি সেখানকার আকাশে উড়োজাহাজ চলাচল করতে পারবে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক ব্যক্তিদের নিয়ে আশদোদ বন্দরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। ২ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (আইটিএফ) মহাসচিব স্টিফেন কটন আল–জাজিরাকে বলেন, জাতিসংঘের আইনটি একেবারে পরিষ্কার। আন্তর্জাতিক জলসীমায় অহিংস মানবিক কর্মকাণ্ড–সংশ্লিষ্ট কোনো নৌযানে হামলা অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য। এই আইন কোনো দেশ ইচ্ছেমতো অমান্য করতে পারবে না। সমুদ্রকে কোনোভাবেই যুদ্ধের মঞ্চ বানানো যাবে না।
ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন নৌবহরে থাকা আইনজীবীরা। নৌবহর থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক হাসান মাসুদ বলেন, ইসরায়েলের সব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয়েছে। ইসরায়েলের মাধ্যমে যেসব আন্তর্জাতিক ও সমুদ্র আইনের লঙ্ঘন হয়েছে, সেগুলো নথিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ–নিন্দা
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের বাধার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। বুধবার রাতে আক্রমণ শুরুর পরপরই ইতালিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে বিক্ষোভ হয় কলম্বিয়া, তিউনিসিয়া, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক, স্পেন, মালয়েশিয়া, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সে। নৌবহরে ইসরায়েলের পদক্ষেপের কারণে আজ শুক্রবার ইতালিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
বুধবার রাতে ইতালির নেপলসে একটি রেলস্টেশনে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তারপর রেলপথের ওপর মিছিল করেন। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের বাইরে জড়ো হন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান বহু মানুষ। বিক্ষোভের সময় অনেকের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা।
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর দুই যুদ্ধজাহাজ দুই দিক থেকে ঘিরে রেখে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র একটি নৌযানকে আশদোদ বন্দরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ ইসরায়েল। ২ অক্টোবর ২০২৫ ছবি: রয়টার্স।
ফ্লোটিলা ঘিরে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আঙ্কারায় নিজ দল ‘একে পার্টির’ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, নৌবহরে থাকা তুরস্কের নাগরিকদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। আর তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নৌবহরে ইসরায়েলের ‘হামলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’।
নৌবহর থামিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো জানিয়েছেন, দেশটি থেকে ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
৭. মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের মিছিল। ২ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স
এ ঘটনার সমালোচনা করা অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কাতার, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মিসর ও যুক্তরাজ্য। আর জাতিসংঘের মুখপাত্র থামেন আল খিতান এক ই–মেইলে রয়টার্সকে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যে অবৈধ অবরোধ জারি রেখেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেসামরিক ত্রাণবাহী নৌবহরে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তা আরও বিস্তৃত হলো।
ফ্লোটিলায় আগে যত হামলা
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর দুই যুদ্ধজাহাজ দুই দিক থেকে ঘিরে রেখে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র
ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সংযোগ রয়েছে বলে আগে থেকেই দাবি করে আসছিল ইসরায়েল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি তারা। এ ছাড়া ফ্লোটিলাকে গাজার দিকে না এগোতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এমনকি গাজার দিকে যাত্রার সময় বহরের একটি নৌযানে ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটেছিল।
এমন পরিস্থিতিতে নৌবহরটিকে সুরক্ষা দিতে এগিয়ে এসেছিল কয়েকটি দেশ। বহরে মানবিক সহায়তা ও উদ্ধারকাজের জন্য নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করেছিল ইতালি ও স্পেন। তবে নৌবহরটি গাজা থেকে ২৭৭ কিলোমিটার দূরে পৌঁছালে নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে নিজেদের জাহাজগুলো ফিরিয়ে নেয় ইতালি ও স্পেন। এরপর বুধবার নৌবহরটিকে বাধা দেয় ইসরায়েল।
এর আগেও গাজামুখী নৌবহরে ইসরায়েলের হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালে। সে বছর ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলায়’ ইসরায়েল হামলা চালালে ১০ অধিকারকর্মী নিহত হন। এরপর ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি নৌবহর আটক করে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০২৪ সালে আরেকটি নৌবহরের যাত্রা শুরুর আগেই থামিয়ে দেয় ইসরায়েল।
এ বছরও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আগে বেশ কয়েকটি নৌবহর ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। এর মধ্যে জুন মাসে ইতালি থেকে গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি নৌযান আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। তখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। পরে জুলাই মাসে ‘হান্দালা’ নামের আরেকটি নৌযান আটক করা হয়।