বাজারে ধানের দামে বিষন্নতার ছাপ কৃষকের কপালে
সার,বীজসহ সকল জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারনে এই বছর দুই কিয়ার জমি আবাদ করতে ১৩ হাজার টাকা খরচ করে হয়েছে কৃষক নুরুল মিয়া। তিনি ধান পেয়েছেন ১৬ মন। বাজারে ধানের মূল্য সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের হোসেন পুর গ্রামের বাসিন্দা। শনির হাওর পাড়ের ধান শুকানোর খলায় তিনি ক্ষোভের সাথে জানান,৬মাসে কষ্ট করে লাভ হল ৩ হাজার টাকা। আর রৌদ,বৃষ্টি, বজ্রপাত সব আমাদের উপর দিয়েই যায়। অনেক কষ্ট আমাদের কিন্তু ধানের দামের বেড়ায় মাথায় হাত পরে।
নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য বৃদ্ধির কারনে আমার মত হাওর পাড়ের কৃষকদের ধান চাষ করে লাভ নেই। আর লাভবান হতাম যদি সরকার বৈশাখ মাসে ১০দিনের মধ্যে ধানের মূল্য নির্ধারণ করে ক্রয় করা শুরু করতো তাহলে আমরা লাভবান হতাম। ক্ষতির শিকার হতাম না। এদিকে খাদ্য গোদামেও ধান দিতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
তিনি আরও বলেন,আমরা কৃষক বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় পুষলে পুষব না পুষলেও আমরা কৃষি কাজ করেই বাচঁতে হবে। বৈশাখে মাঠে সোনার ধান দেখে যতটানা মন ভরে যায় বাজারে ধানের দাম কম থাকায় ততটাই হতাশ আর বিষন্নতার ছাপ পরে যায় কৃষকের কপালে। সকল হাসি নিমিষেই যেন শেষ না হয়ে যায় আর কৃষি ভিত্তিক দেশে কৃষকের স্বপ্ন আর যেন উপেক্ষিত না হয় তার জন্য সরকার তাদের দিকে সুদৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার দাবী জানান এই কৃষক। উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওর গুড়ে দেখাগেছে,ধানের চারা রোপন থেকে শুরু করে গোলায় তোলা পর্যন্ত যে টাকা খরচ ও শ্রম দেয়া হয় তার সঠিক মূল্য পাচ্ছে না কৃষকগন। কষ্টে ফলানো সোনার ধান হাওরের গভীর থেকে সোনার ধান কেটে খলায় এনে মাড়াই,শুকানো, গোলায় তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। সাথে যোগ দিয়েছেন তাদের ছেলে মেয়েরা। স্থানীয় পায়কাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয় না করায় বাধ্য হয়ে খলা থেকেই কম মূল্যে ধান বিক্রি করছেন।
এসময় কথা হয় শনি হাওরের কৃষাণী জড়িনা বেগম জানান,বৈশাখের শুরুতেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য গোদামে কৃষকরা ধান দিতে না পারার সুযোগে স্থানীয় পায়কাররাও সিন্ডিকেট করে ধানের মুল্য কমিয়ে ক্রয় করছে। আর ধান কাটাসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়ে উৎপাদিত ধান খলায় বিক্রি করছেন। ফলে সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না বলে জানান এই কৃষাণী। তিনি আরও জানান,হাওরাঞ্চলে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়েই জমি আবাদ করছেন তাই কৃষকদের কথা বিবেচনা করার দাবী জানান তিনি।
হাওর পাড়ে কৃষকদের দাবী,সরকার যেন কৃষকদের স্বার্থে বৈশাখের শুরু থেকেই ধানের মূল্য নির্ধারণ,বীজ,সার সহ কৃষি উপকরন কম মূল্যে ক্রয় করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ধান কাটার মেশিন হাওরে ধান কাটে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খরচের কমে আসবে,এতে করে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হাসান উদ দৌলা বলেন,উপজেলায় হাওরে চলতি মৌসুমে ১৭হাজার ৪৬৫হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষ করা হয়েছে। এতে ৮০হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার মূল্য ২শ ৪৪কোটি ৮০লাখ টাকার বেশী। উপজেলায় ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। আমরা চাষাবাদের শুরু থেকেই কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আর আবহাওয়া খারাপ হবার আশংকা থাকায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার কাজ শেষ করার পরামর্শ দিচ্ছি।এবার সুনামগঞ্জের ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। যার মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি