জুড়ীতে বন্যায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
তানজির আহমেদ রাসেল : টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে
উপজেলা সদরসহ হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী
নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের দেয়া তথ্যমতে, জুড়ী নদীর পানির বিপদসীমা ৮.৯৩ সেন্টিমিটার । ঈদের আগের দিন থেকে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে এই নদীর পানি এখন ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাকালুকি হাওর ফুলে ফেঁপে উঠে প্লাবিত করেছে আশেপাশের গ্রাম।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে প্রচুর ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জুড়ী - বটুলী শুল্ক স্টেশন সড়কের বিভিন্ন জায়গা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ছুটছেন। অনেকেই উঠেছেন বিভিন্ন ভাড়া বাসায়। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন মানুষ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপকেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। যে কোনো সময় ব্ল্যাকআউট হয়ে যেতে পারে পুরো উপজেলা।
বুধবার (১৯ জুন) উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন এমপি জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি জুড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং এসব পরিবারের মধ্যে রান্না করা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাইন উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা,
বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম হেলাল উদ্দিন ।
এছাড়া, মঙ্গলবার রাতে জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনফর আলী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, “বন্যায় উপজেলার ৬৫ টি গ্রামের অর্ধ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জুড়ীতে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩১ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আরো ১১০ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।