নাসিরনগরে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভলাকুট কার্ত্তিক মেলা
আকতার হোসেন ভুইয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুটে রাসপূঁজা উপলক্ষে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কার্ত্তিক মেলা চলছে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর তিনদিন ব্যাপী মেলা হওয়ার কথা থাকলেও মেলা চলে প্রায় মাসব্যাপী। মেলায় প্রধান আকর্ষন হল কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের কাঠের ফার্নিচার। এছাড়াও মেলায় বসে রকমারী শতাধিক দোকান। নানা রং-বেরংয়ের বেলুন,খেলনা,কসমেটিক,মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের দোকানে মেলা প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষের আগমনে প্রতিদিন বিকেলে মেলাটি এলাকার মানুষের হিন্দু-মুসলিমদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস পূর্ণিমা তিথিতে উপজেলার ভলাকুট বাজারের নদীর পাড়ের চন্ডীতলায় আয়োজিত কার্ত্তিক পূঁজা উপলক্ষে প্রায় দুইশত বছর ধরে এ মেলা হয়ে আসছে।নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামসহ সরাইল, বাজিতপুর,অষ্টগ্রাম,লাখাই,ভৈরব ও নরসিংদী থেকে এই মেলায় কেনাকাটা করতে লোকজন আসে। বিশেষত কাঠের আসবাবপত্র কিনতে অনেক দূর দুরান্ত থেকেও লোকজন আসে। নদীপথে পরিবহন সুবিধা থাকায় ক্রেতারা এখান থেকে কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মঙ্গলবার বিকালে মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, নানা বয়সী নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। প্রসাধনীর দোকান গুলোতে নারীদের উপচে পড়া ভীড় ও নাগরদোলা আর উড়োজাহাজে চড়তে শিশু-কিশোরদের আগ্রহ দেখা গেছে বেশী।
আয়োজকরা জানায়,রবিবার(১৭ নভেম্বর)থেকে শুরু হওয়া মেলার প্রথম সপ্তাহ-দশদিন নানা রং-বেরংয়ের বেলুন,খেলনা,কসমেটিক,মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর দোকানের বেচাকেনা চলবে। এরপর এসব পণ্যের দোকান উঠে গেলে কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের বেচাকেনা শুরু হয়। তা চলে আরও প্রায় দুই সপ্তাহ। দেশের দুরদুরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে মেলায় তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এছাড়াও মেলায় বিক্রি হয় মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি ও তৈজসপত্র।
বেলাব থেকে আসা ফার্নিচার ব্যবসায়ী সফিক মিয়া জানান,তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে এ মেলায় ফার্নিচার নিয়ে আসেন। প্রতিবারেই প্রসাধনীর দোকান চলে যাওয়ার পর তাদের ফার্নিচার বিক্রি শুরু হয়।
মেলায় আগতরা জানায়,এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো।এখনো বহু পুরনো প্রথা প্রচলন থাকায় আমরা ধারণা করছি,এ মেলা আদিম কালের। এককালে মেলা হতো তিন দিনব্যাপী। বর্তমানে প্রায় মাসব্যাপী এ মেলা হয়ে থাকে।
ভলাকুট ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য সামসু তালুকদার জানান, রাসপূঁজা উপলক্ষে এখানে শত বছর আগে থেকে কার্ত্তিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।এই মেলা আমাদের ভলাকুট গ্রামের ঐতিহ্যবহন করে। মেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে।