জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

জার্মানির ২১তম জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের ৪৫ দিন পর ৯ এপ্রিল নতুন জোট সরকার গঠনের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে জার্মানির প্রধান দুই দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ ও সিএসইউ) ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সরকার পরিচালনার নীতি নিয়ে ছিল ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।
৬৩০ আসনবিশিষ্ট জার্মানির পার্লামেন্টে এবারের নির্বাচনে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ ও সিএসইউ) দলটি পেয়েছিল ২০৮টি আসন, কট্টরবাদী অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) ১৫২টি আসন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ১২০টি আসন, পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ৮৫টি আসন এবং বাম দল দ্য লিংকে পেয়েছিল ৬৪ আসন আর সারা ভাগেক্নাসটের দল (এসএসভি) পেয়েছে ১ আসন। এই নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল, কট্টরবাদীদের উত্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মান গণতন্ত্রে এই প্রথম পার্লামেন্টে ১৫২টি আসন নিয়ে কট্টরবাদী এএফডি দলটি প্রধান বিরোধী দল হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনের আগে সিডিইউ ও এসপিডি সরকার পরিচালনার নীতি নিয়ে একে অপরের সমালোচনায় মুখর থাকলেও নির্বাচনের পর সমঝোতা বা জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে ১৯ বার বৈঠক করেছে। বিভিন্ন নীতিতে একে অপরকে ছাড় দিয়ে ৯ এপ্রিল ১৪৪ পৃষ্ঠার জোট সরকার গঠনের রূপরেখা সামনে এনেছে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানিতে ১৯৪৯ সালের পর থেকেই গণতান্ত্রিক প্রথায় নির্বাচন হচ্ছে। জার্মানির রাজনীতিতে সরকার গঠনের ঐতিহ্য হলো, জোট বেঁধে সরকার গঠন। কারণ, সরকার গঠনের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কোনো দলই পায় না। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তাই এবারও সরকার গঠন করতে গিয়ে জোট বাঁধা ছাড়া বিকল্প ছিল না।
আগামী চার বছর সরকার পরিচালনার জন্য যে বিষয়গুলো জোট সরকারে রূপরেখায় এসেছে, তা হলো দুর্বল জার্মান অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপের পাশাপাশি জলবায়ু রক্ষায় কয়লা ব্যবহারের হ্রাস, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর মনোভাব, ডিজিটালাইজেশন বাধ্যবাধকতা, একই ধরনের পররাষ্ট্রনীতি সচল রাখা, প্রতিরক্ষা বিষয়ে আমূল পরিবর্তন, পরিবহন ও কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসন বিষয় নিয়ে নতুন নীতি। জোট আলোচনায় অভিবাসন নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিষয়ে ভিন্নমত বেশি দেখা দেয়।
রাজধানী বার্লিনে গত বুধবার জোট সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করতে গিয়ে সিডিইউ নেতা ও সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, ‘আমাদের এই জোট সরকার গঠন চুক্তি থেকেই প্রতীয়মান হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক কেন্দ্র সমস্যা সমাধানে সক্ষম। আমরা দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিযোগিতার দিকে এগিয়ে যাব।’
জোট সরকারের অপর সঙ্গী সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের সহ-নেতা লার্স ক্লিংবেইল বলেন, ‘এ ঐতিহাসিক সময়ে দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর জোর দেব। এটা একটা ভালো লক্ষণ যে জোটবদ্ধ দলগুলোতে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও একটি সেতুবন্ধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
ক্লিংবেইল জোর দিয়ে বলেন, জার্মানি অভিবাসনের একটি দেশ এবং এখানে আশ্রয়ের বিষয়ে মৌলিক অধিকার অলঙ্ঘনীয়।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির নতুন জোট চুক্তিতে অভিবাসন নীতির বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করে এটিকে মানবাধিকারের অবমাননা বলে অভিহিত করেছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় মতো দেশের শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর হুমকি ও বিভিন্ন মানবিক বিষয়ের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিষয়ে প্রতিবাদ করেছে অ্যামনেস্টি।
জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠনের কথা রয়েছে। এতে থাকবে সিডিইউর ৭ জন, সিপিডির ৩ জন এবং সিএসইউর ৭ জন।
নতুন সরকার গড়ার লক্ষ্যে জোট চুক্তিটি এখন তিন দলের সদস্যদের অনুমোদনের প্রয়োজন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ অথবা ৭ মে ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে অভিষিক্ত হবেন।