যুদ্ধের অবসান চাইলে জেলেনস্কিকে ন্যাটোর আশা ছাড়তে হবে : ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাইলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আশা ছাড়তে হবে। তিনি আরও জানান, ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ইউক্রেন ফিরে পাবে না, কারণ ২০১৪ সালে রাশিয়া সেটি দখল করে নিয়েছে। খবর বিবিসির। আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ করতে পারেন। ন্যাটোতে ইউক্রেনের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। আর ২০১২ সালে (বারাক ওবামার সময়) বিনা প্রতিরোধে দেওয়া ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়ারও সুযোগ নেই।”ট্রাম্পের এই অবস্থান প্রকাশ পায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক আলাস্কা বৈঠকের পর। ওই বৈঠকে তিনি যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে সরে এসে স্থায়ী শান্তিচুক্তির ওপর জোর দেন।
এদিকে, রোববার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে জেলেনস্কি আবারও কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আহ্বান জানান। মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ দাবি করেছেন, পুতিন ন্যাটোর অনুরূপ একটি নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন, যা ইউক্রেনের জন্য ‘গেম চেঞ্জিং’ হতে পারে।উইটকফ সিএনএনকে বলেন, “আমরা যে ছাড়টি পেয়েছি তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দিতে পারে।” তবে তিনি আরও জানান, ইউক্রেন যদি এ ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে রাজি হয় তবেই এ সমাধান কার্যকর হবে।সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টুব এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। স্বল্প নোটিশে এত বিপুলসংখ্যক ইউরোপীয় নেতার ওয়াশিংটনে একত্র হওয়া আধুনিক কূটনৈতিক ইতিহাসে প্রায় নজিরবিহীন।ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরা, যাতে রাশিয়ার সামনে কোনো দুর্বলতার ছাপ না পড়ে।”
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আলাস্কা বৈঠকে পুতিন আবারও পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল দখলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের আলোচনা কেবল ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে হতে পারে।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ সংঘাতের অবসান এত দ্রুত হবে না। তিনি বলেন, “আমরা কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছি, তবে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। তাই যুদ্ধ শেষ করতে আমাদের সামনে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি।”