বিপদসীমার উপরে সিলেটের প্রায় সব নদ-নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্লাবিত হতে শুরু করেছে সিলেট জেলার উত্তরাঞ্চল। ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কিছু উপজেলায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। সিলেটের কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত ৪ তিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিলেট জেলার সবকটি নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলা জুড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, যেহেতু প্রাক বর্ষাকাল চলছে তাই এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে। গত ২৪ ঘন্টায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৪৬.১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, আগামী তিনদিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট-সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক। গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার হাওরাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ এখন পানিবন্দী। এছাড়া উপজেলার রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং।
বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মঙ্গলবার আকষ্মিকভাবে প্লাবিত হয় গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চল। বুধবার সকাল থেকে দ্রুত পানি বাড়তে থাকলে উপজেলা ও জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাওরাঞ্চলে চারশত ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। আক্রান্তরা স্বজনের বাড়িতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী রয়েছেন কয়েক হাজার নর নারী। দ্রুত পানি বাড়ায় শঙ্কিত রয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার ১ নং রুস্তমপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দন জানান, তার ইউপির ঠেকনাগুল, গোজারকান্দি, পাতনী, কাঠালবাড়ি, নয়াপাড়া বীরমঙ্গল, ভেড়ীবিল লামা হাওর এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
আলীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে দ্রুত পানি বৃদ্ধিতে হাওর এলাকার তিতকুল্লি নাইন্দা, ধর্মগ্রাম পাচসেউতি, নয়াখেল, কাকুনাখাই খলাও হাওর, নয়াগ্রাম উত্তর আলীর গ্রাম, পূর্ব দিঘীরপার, হুদপুরসহ হাওর এলাকার আড়াইশত ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। লোকজন আশপাশে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে লোকদের যাবার জন্য বলেছি।
বন্যায় গোয়াইন সারী, গোয়াইনঘাট সালুটিকর, পিরিজপুর সোনারহাট রাস্তায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া লেঙ্গুড়া তোয়াকুল নন্দিরগাঁও ডৌবাড়ি ইউপির হাওরাঞ্চলে কয়েক হাজার নর নারী রয়েছেন পানিবন্দী।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন- উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবন-প্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
সিলেটের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষজন জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার ফসলি ধানের জমি জলমগ্ন হয়েছে। উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ফুলবাড়ী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষ্মীপুর, ২ নম্বর লক্ষ্মীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঁঠালবাড়ী, নলজুরী হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টরের বোরো ধান। উপজেলার বৃহৎ নদী সারী ও বড় নয়াগাং এবং রাংপানি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলার ৪ টি ইউনিয়ন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধি,নিজপাট ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর ইউনিয়ন, দরবস্ত ইউনিয়ন, ও চারি কাটা ইউনিয়ন জৈন্তাপুর ইউনিয়ন আকস্মিক বন্যায় পানি বন্ধী লোকজনদের উদ্ধারের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগফৌদ, বিরাখাই, গাতিগ্রাম, বাউরভাগ, এবং লামনিগ্রাম।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য ৪৮ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ‘অনেক বৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিন ধরে হচ্ছে এবং পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বোরো ধানের ফসল অনেকটা কাটা হয়ে গেছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আমন ও সাইলের চারার ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। কানাইঘাটের লোভা নদীর অববাহিকা কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার সুরমার উত্তর এলাকার নিম্নাঞ্চল ও লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ও ইসলামপুর প্রভৃতি কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ভারতের মেঘালয়া রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে প্লাবনের সৃষ্টি হয়েছে। বানের পানি ক্রমশ সিলেট সদরের উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি ইউনিয়নে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।