মৌলভীবাজারে হাওর পাড়ের কিষান কিষানিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন

পিন্টু দেবনাথ : মৌলভীবাজারে হাওর পাড়ের কিষান কিষানিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বোরো ধান তুলতে।
একদিকে ধান কাটা, অন্যদিকে চলছে ধান মাড়াই।একইসাথে চলে ধান সেদ্ধ ও শুকানো। এ ধরনের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলার কাউয়াদীঘি হাওরপারের বানেশ্রী, রায়পুর, জুমাপুর, কাদিপুর এলাকার যেদিকেই চোখ পড়েছে – সেদিকেই দেখা যায়, বোরো ফসল তোলার মহোৎসব চলছে। সেই সাথে সেদ্ধ ধানের মন কারানো বইছে সেদ্ধ ধানের গন্ধ।
স্থানীয়রা জানান, এখন হাওরের বুকে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ধান মাড়াইয়ের খলা তৈরি করা হয়েছে। চাষিরা খেত থেকে ধান কেটে যার যার নির্দিষ্ট খলায় নিয়ে আসেন। এখানেই চলে মাড়াই, সিদ্ধ, শুকানো ও চাল তৈরি। পরে বাড়ি-ঘরে সেই চাল নিয়ে যাওয়া হয়।
উপজেলার কাদিপুর এলাকায় এ ধরনের একটি ধান মাড়াইয়ের খলায় গিয়ে দেখা যায়, ধান সেদ্ধ করতে ব্যস্ত চল্লিশোর্ধ্ব কিষানি। তিনি বড় তিনটি পাতিলে ধান সাজিয়ে রেখেছেন। পরিমাপ মতো পানি ঢালছেন ধান ভেজানোর জন্য, একটু পর সেই ধানগুলো সেদ্ধ করা হবে।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে ধান কাটতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরসহ জেলার সাতটি উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে ধান কাটা চলছে উৎসবমুখর পরিবেশে। গরম ও বৃষ্টিতে মাঠে কৃষকদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। ধান কাটার পাশাপাশি চলছে মাড়াই-ঝাড়াইয়ের কাজ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার নওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আজাদ মিয়া বলেন, “এবার আমি ২৭ একর জমিতে ব্রি-৮৮ জাতের ধান লাগাইছি। ফলন খুবই ভালো। প্রতি একরে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান পাবো আশা করছি।”
একই এলাকার কৃষক ফজলু মিয়া জানান, “আমার ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশা করছি।”
হাকালুকি হাওরের পাড়ে থাকা কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, “এবার ৪ একর জমিতে ধান লাগাইছি। ফলন এত ভালো যে আশা করছি ২০০ মণ ধান তুলতে পারবো। গতবারের ক্ষতি এবার পূরণ হবে।”
হাইল হাওরের ধান কাটা কাজে ব্যস্ত খাইছড়া ও জাগছড়া চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক পূজন ভুঁইয়া, রানা ভুঁইয়া, সাজু ভুঁইয়া, সুমন চাষা ও গনেশ মুড়া জানান, “বোরো মৌসুমে আমরা ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। গত বছর মজুরি ছিল ৩৫০ টাকা, এবার ৪৫০ টাকা পাচ্ছি। প্রচণ্ড গরম থাকায় খুব ভোরে কাজ শুরু করি, শেষ হয় দুপুরে।”
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে ব্রি-৯২ জাতটি হাওর এলাকার মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। আমরা আশা করছি ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপাদিত হবে।”
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং শিলাবৃষ্টির মতো কোনো দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর বোরো মৌসুমটি মৌলভীবাজারের কৃষকদের জন্য একটি সফল অধ্যায় হয়ে থাকবে। বাম্পার ফলনে শুধু কৃষকের মুখেই হাসি নয়, এটি জেলার অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, উপজেলায় ৫০৬০ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে। তিনি ৮০ ভাগ পেকে গেলে কৃষকদের দ্রুত কাটার পরামর্শ দেন।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১১৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যো প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোরো ধান কর্তৃন করা হয়েছে। তিনি কৃষকদের দ্রুত পরামর্শ দিয়েছেন হাওর এলাকার বোরো দ্রুত কেটে ঘরে তোলার জন্য।