করোনা ভাইরাস আতংকে কেমন আছেন ইতালীর সিসিলী দ্বীপের বাংলাদেশী প্রবাসীরা
ইতালীর সব থেকে বড় দ্বীপ সিসিলী। এই দ্বীপরের ছোট বড় প্রায় সব শহরেই আনুমানিক ২০থেকে ২৫ হাজারের মত বাংলাদেশীদের বসবাস। বর্তমানে ইতালিতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়ায় ইতালীয়ান নাগরিকদের পাশাপাশি অনেক বাংলাদেশী মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে।সিসিলী দ্বীপের রাজধানী পালেরমোতে ইতালীর দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সর্বপ্রথম গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ইতালীর উত্তরাঞ্চল থেকে পালেরমো শহরে বেড়াতে আসা একজন পর্যটকের শরীরে এই কোভিড-১৯ ধরা পরে। তারপর পালেরমো শহরের সব প্রাইমারী ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল গত ২ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা সীমিত করা হয় ,কিন্তু সমস্ত ইতালী জুড়ে কোরানাভাইরাস ভয়াবহ ভাবে বিস্তার লাভ করে করায় আগামী ১৫ই মার্চ পর্যন্ত স্কুল কলেজ বিশবিদ্যালয় এবং যে কোন ধরণের ইভেন্ট আয়োজন না করার ঘোষণা দিয়েছে।
ইতালীর ইমিগ্রেশন অফিস (কস্তুরা) গত ২ মার্চের এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৩০ দিনের জন্য সকল প্রকার সৌজন্য (ওয়ার্ক পারমিট ) নবায়ন এবং জমা দেয়ার কাজ স্থগিত করেছে । অবস্থা স্বাভাবিক হলে সবাইকে আবার মেসেজের মাধ্যমে নতুন তারিখে এপয়েন্টমেন্ট দেয়া হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে তারা উল্ল্যেখ করেন । এছাড়াও আজকের নতুন নিৰ্দেশনা অনুযায়ী পালেরমো শহরে সব থিয়েটার,লাইব্রেরী, সিনেমা,মিউজিয়াম,ডীস্কো পাব,জিমনেসিয়াম আপাদত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে , শেষ খবর পোয়া পর্যন্ত সিসিলী দ্বীপে মোট ৩৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়। ইতালীয়ান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানা যায় ইতিমধ্যে সিসিলীতে মোট ৭৯১ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে ৭৩৯ জনের শরীরে ভাইরাস ধরা পড়েনি,৯ জন রিজাল্টের অপেক্ষায় আছেন এবং ৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। এছাড়াও আরো ৩৫ জন নিজ তত্তাবধানে নিজ বাসায় পর্যবেক্ষণে আছেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুতে পালেরমোতে তেমন লক্ষ্য না করা গেলেও বর্তমানে মানুষ অনেকটা আতংকিত। অনেক চাইজিজ রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনির্ধিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এই সব প্রতিষ্ঠানে অনেক বাংলাদেশী কাজ করতেন যারা বর্তমানে বেকার জীপন যাপন করছেন ভবিষতের কথা চিন্তা করেতারা অনেকটাই উদ্বিগ্ন। পালেরমোতে ভাইসারের কারণে পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও যারা দেশে পরিবারের সাথে ছুটি কাটানোর কথা চিন্তা করে টিকেট করেছিলেন এবং যাদের এখন ছুটি কাটিয়ে ইতালিতে ফেরত আসার কথা ছিল বেশ কিছু দেশ ইতালীর সাথে তাদের বিমান চলাচল স্থগিত করায় অনেকেই টিকেট জটিলতায় ভুগান্তিতে পড়েছেন।
ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার প্রবাসী বাংলাদেশিদের আতঙ্কিত না হয় ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলার অনুরোধ করেছেন। দূতাবাস বন্ধ রাখার কোনরকম নির্দেশনা আসেনি উল্লেখ করে তিনি জানান, দূতাবাসের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। যারা সেবা নিতে আসছেন, তাদেরকে সতর্ক করন বার্তা দেওয়া হচ্ছে এবং সকল কর্মকর্তা এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন।রাষ্ট্রদূত সকলকে সতর্ক করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, আপনারা জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন, বাস ট্রাম এবং অন্যান্য যানবাহন চলাচলের সময় মাস্ক ব্যবহারের চেষ্টা করবেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন এবং বাসস্থানও পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও রাষ্ট্রদূত সাংবাদিক রাজনৈতিক সহ সকল সংগঠনের নেতাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা এবং সবাইকে সতর্ক করার অনুরোধ জানান।