অষ্ট্রিয়ার ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ভিয়েনা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত
আজ ১১ অক্টোবর ভিয়েনার সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোল । এ বৎসর মহামারী করোনার কারনে প্রায় ৩৫% জনগন তাদের ভোট পোস্টের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন । বাকিরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে দেখা যায় । এখানে ১০০% গণতন্ত্র অনুযায়ী ভোট হয়ে থাকে । জনগন নিজেদের পছন্দের পার্টীকে ভোট দিয়ে থাকেন ।পার্টি যাদেরকে সিটি কর্পোরেশনে পাঠাবেন তাদের লিস্ট ভোটের পূর্বেই প্রকাশ করেন ।সেই অনুযায়ী মাহমুদুর রহমান নয়ন অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টী (ÖVP) থেকে ৭নং লিস্টে ছিলেন । শতকরা আনুপাতিক হারে পার্টি সিট পাবেন । সেই অনুযায়ী নয়ন এবার নির্বাচিত হলেন । নয়ন কে সমর্থন করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী সহ সকল কে ধন্যবাদ জানান ।
মাহমুদুর রহমান নয়ন নির্বাচিত হওয়ায় অষ্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় । অনেকেই নয়নের সাথে দেখা করার জন্য ছুটে আসেন । যারা আসতে পারেন নি তারা নয়ন কে ফোনে শুভেচ্ছা জানান ।
মাহমুদুর রহমান নয়ন ১৯৯৫ইং ভিয়েনায় জন্ম গ্রহণ করেন। মাত্র ১ বৎসর বয়সে পরিবারের সাথে পারি জমান বাংলাদেশে। ৫ম শ্রেণী অতিক্রম করে চলে আসেন পরিবারের সাথে আবার ভিয়েনায়। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর যুবক অষ্ট্রিয়ায় চলে আসার পর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
অষ্ট্রিয়ায় আসার পর ভর্তিহন স্থানীয় একটি হাইস্কুলে। এখানের পড়ালেখা করতে হয় জার্মান ভাষায় কিন্তু এই ভাষা তার মোটেও জানা ছিলনা। ক্লাসের অন্যান্য পড়ার সাথে তাকে ভীষণভাবে জার্মান ভাষা আয়ত্ত করতে হয়। ক্রমাগতভাবে তার স্কুলে শুনাম ছড়িয়ে পরে পুরো স্কুলে।হাইস্কুলে যখন ফাইনাল পরীক্ষা হয়,তখন ঐ স্কুলে সে প্রথম স্থান অর্জন করেন। স্কুলের ডিরেক্টর তাকে মডেল হিসেবে ঘোষণা এবং সম্বর্ধনা দেন।
এরপর মাহমুদুর রহমান নয়ন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভর্তি হন ভিয়েনার একটি নামকরা Higher Technical College এ (HTL)। এখানে ভর্তি হয়েই কলেজের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, চাইতেন কলেজের নিয়ম কানুনের পরিবর্তনের। এক পর্যায়ে প্রতিবাদী ছাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন কলেজে, নেতৃত্ব দেন তরুণদের। সেই সুবাদে কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা তাকে পর পর দুই বার ঐ কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। এর পর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কলেজের উন্নয়ন এবং ছাত্র ছাত্রীদের নানা বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এক সময় নয়ন অষ্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
নয়ন ঐ কলেজের ফাইনাল পরীক্ষায় Software Engineering এ অষ্ট্রিয়ান গ্রেড অনুযায়ী Excellent Result করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য নয়ন ব্রিটেনে চলে যান। সেখানে ভর্তি হন University of Central Lancashire(UCLan) Software Engineering Department এ। ব্রিটেনে থাকলেও অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টির যুব ইউনিটের তার সম্পৃক্ততা ছিল বেশ জোরাল । নয়ন B.Sc.Hon`s in Software Engineering এ Frist Class পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তারপর ভর্তি হন নয়ন B.Sc.Hon`s in Software Engineering এ Frist Class পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তারপর ভর্তি হন একই বিশ্ব বিদ্যালয়ে M.Sc তে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজমেন্টে। M.Sc তে ও Frist Class পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর নয়ন ফিরে আসেন ভিয়েনা, চাকরিতে যোগ দেন জার্মানির একটি নাম করা আই টি কোম্পানিতে । সাথে সাথে সক্রিয় হন রাজনীতিতে ।নয়ন ভিয়েনার অষ্ট্রিয়ান তরুনদের আরও বেশী পরিমানে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেন। তরুনদের মাঝে আরও রাজনৈতিক ধারনা বৃদ্ধি করতে তরুন এই রাজনীতিবিদ বিভিন্ন রাজনৈতিক কেম্পেইনে অংশ গ্রহন করেন এবং রাজনীতিতে তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান ।
প্রবাসে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশী বেড়ে ওঠা তরুনদের নিয়ে মাহমুদুর রহমান নয়ন বলেন, প্রবাসে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশী তরুণরা নিজেদের কমিউনিটিতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরী।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনীতির আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। বড় বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদগুলিতে তরুণদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। নুতন ব্যবসা এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। এছাড়াও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে, তবেই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। তার বাবা অষ্ট্রিয়ায় ১৯৮৪ ইং সালে ভিয়েনা আসেন। বাবা মায়ের অনুপ্রেরোনায় তিনি আজ এ পর্যন্ত এসেছেন।