দক্ষিণ সুরমায় সিসিকের আবর্জনা করোনাভাইরাস ঝুঁকির মুখে দক্ষিণ সুরমাবাসী
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়া এলাকায় সিসিকের আবর্জনা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ। আবর্জনা থেকে মারাত্মক রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে লোকজনের মাঝে। নগরীতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হলেও স্প্রে করা হয়নি লালমাটিয়ার আবর্জনায়। এতে করোনাভাইরাস ঝুঁকির মুখে দক্ষিণ সুরমাবাসী। বড়ই বিপাকে পড়েছেন সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাওয়া-আসা করে লাখো যাত্রী সাধারণ। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭ টি ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেয়া হয় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পারাইরচক সংলগ্ন লালমাটিয়া এলাকায়। পাশে রয়েছে সোনারগাঁ ও রয়েল সিটি আবাসিক প্রকল্প। সোনারগাঁ আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ। মানুষ দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে নাকে রুমাল চেপে চলাচল করেন। নাকে চেপে চলাচল যেন এ সড়কের যাত্রী সাধারণের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়া এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনার ভাগাড়। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত দেন-দরবার, প্রতিবাদ, সমাবেশ, স্মারকলিপি দেয়া হচ্ছে এরপরও টনক লড়ছে না সিসিক কর্তৃপক্ষের।
সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নাক চেপে চলাচল যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কত কাল নাক চেপে চলাচল করতে হবে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের? সিসিকের আবর্জনার বাগাড়ের কারণে পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। বায়ু দূষণের ফলে হচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। লালমাটি এলাকায় আবাসন প্রকল্প থাকলেও তা সফলতার মুখ দেখছে না।
সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের লালমাটিয়া এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান। ঐ এলাকা অতিক্রম করতে হলে যাত্রী ও পথচারীদের নাক চেপে ধরতে হয়। ময়লা-আবর্জনা দুর্গন্ধ সহ্য করার নয়। দক্ষিণ সুরমাবাসী আবর্জনার ভাগাড় এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানালেও কর্ণপাত করছে না সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সম্প্রতি সিলেট পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন গঠন করে বর্জ্য বিরোধী আন্দোলন করা হচ্ছে। এই সংগঠনের ব্যানারে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সিলেটের প্রবেশ দ্বার দক্ষিণ সুরমা। ইতিহাস-ঐতিহ্যে দক্ষিণ সুরমাবাসীর রয়েছে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন এবং সিটি কর্পোরেশনের ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এছাড়া সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি’র কার্যালয়, এসএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউটর) এর কার্যালয়, সিলেট শিক্ষাবোর্ড, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, সরকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে দক্ষিণ সুরমায়। কিন্তু এতসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ম্লান করে দিয়েছে সিসিকের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক দিয়ে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সকল ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেয়া হচ্ছে লালমাটিয়া নামক স্থানে। এতে বর্জ্যরে গন্ধে অত্র এলাকার পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ১৬ একরের ঐতিহ্যবাহী ভাড়েরা বিলটি সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এতে বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মৎস্য উৎপাদন বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে নিকটস্থ কৃষি জমি, পার্শ্ববর্তী মেদী বিলসহ অনেক অনাবাদী জমি নষ্ট হচ্ছে, হুমকির সম্মুখীন বেসরকারী খাতের মাছের খামার। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এসব আবর্জনা আগুন দিয়ে পোড়ানো হলে কুয়াশা আর আগুনের ধোয়ায় একাকার হয়ে যায়। এতে করে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে বেগ পেতে হয়। মাঝে-মধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশকে দূষিত করে তুলে। এ সড়ক দিয়ে যাতাযাতকারী যাত্রী ও পথচারীরা নাক চেপে চলাচল করতে হয়। লালমাটিয়া এলাকায় সোনারগাঁ ও রয়েল সিটি নামে দুটি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু সিসিকের আবর্জনার কারণে এ দুটি আবাসিক প্রকল্প শুধু খালি জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। দেখছে না আলোর মুখ। কেউ বাড়ী বানাচ্ছে না দুর্গন্ধের কারণে।
জানা যায়, ভাগাড়টির উত্তর দিকে ভাড়েরা বিলের পাশেই বোরো ফসলি জমি, দক্ষিণ আলমপুর, ছিটা গোটাটিকর, কুচাই ও শ্রীরামপুরের সব বোরো জমির অবস্থান সেখানে। লোহাজুড়ি, মেন্দি ও কুচাই বিল থেকে সেচের পানির মাধ্যমে বোরো ফসল ফলে। বাগাড়ের তিন দিকে দেয়াল নির্মাণ করে ভাড়েরা বিলের অংশ উন্মুক্ত রাখায় বর্ষার পানির সাথে সিটি কর্পোরেশনের ফেলা বর্জ ভেসে গিয়ে পড়ছে বিল ও ফসলী জমিতে এতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে কৃষকদের। লালমাটি এলাকার বর্জ্যরে দুর্গন্ধ বন্ধ করতে সিসিক উদ্যোগে নিলেও তা সফল হয়নি। অত্র এলাকাবাসীকে সিসিকের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বাস প্রদান করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এলাকাবাসী অবিলম্বে পরিবেশ দূষণ বন্ধসহ বর্জ্য যাতে কোন অবস্থাতে বিলে, রাস্তায় এবং কৃষি জমিতে না যায় এবং দুর্গন্ধ না ছড়ায় সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।