নদী খনন না করায় তাহিরপুরে নৌজট,দূর্ভোগে নৌযান,ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি : বাল্কহেড নৌকা দিয়ে পণ্য(কয়লা ও চুনাপাথর) পরিবহন করে যেখানে আমাদের লাভ হওয়ার কথা সেখানে লোকসান হচ্ছে। সময় মত নিদিষ্ট স্থানে পৌছাতে না পারায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এদিকে বাড়িতে মা,বাব,বৌ ছেলে মেয়ে রেখে এসেছি তারাও অপেক্ষায় আছে আমাদের জন্য। প্রতি বছর এই সময়টায় নদীতে নাব্য সংকটের কারণে আমার মত শত শত নৌকার মাঝিরা ঘাটে বসে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা নদী খননে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এমনি কথা গুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে পাটলাই নদীতে নাব্যতা সংকটের কবলে পড়ে তীব্র নৌজটে আটকে থাকা নৌকার মাঝিরা।
তারা আরও জানায়,প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম থেকেই এ নদীতে নৌজটের কারনে যেখানে ৩০-৪০মিনিট সময় লাগার কথা সেখানে এক থেকে দেড় মাস ধরে আটকে থাকে। আমি গত ১২দিন ধরে আটকে আছি। কখন যে নৌকা নিয়ে যেতে পারব জানি না। এদিকে নৌজটে আটকা পড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি আর নৌকায় শ্রমিকদের মজুরি,খাওয়া-দাওয়া ও নিজেদের পকেট খরচ হচ্ছে এতে যে ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি তাতে নিজেদের পকেট থেকে টাকা যাবে। এর সমাধান না হলে আর এই দিকে নৌকা আসবে না বলে জানিয়েছেন নৌযান মালিক শ্রমিকগন।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, দিন দিন নৌযটের সংখ্যা বাড়বে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় পাটলাই নদীর সুলেমানপুর বাজার থেকে কানামইয়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নৌজট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সুবিধা ভোগী সুলেমানপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় আর বিপাকে পড়েছেন নৌযান মালিক ও মাঝিরা। নদী খনন করা খুবই প্রয়োজন। নদীতে প্রতিদিন সিরিয়াল নিয়ে নৌকা জট থেকে ২৫-৩০টি বের হচ্ছে অপর দিকে অর্ধশতাধিক নৌকা নৌ জটে আটকা পড়ছে।
এদিকে পাটলাই নদীতে নৌ-জটের ঘটনা সরজমিন পরিদর্শনে আসেন তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সভাপতি খসরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক সবুজ আলম ও সহ সভাপতি বাচ্চু মিয়া। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীশুল্ক স্টেশনের আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীরা।
নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা জানান,গত দুই যুগ সময় ধরে প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম থেকে চৈত্র মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নদীর পানি শুকিয়ে নদীর গভীরতা কমে যায় আর প্রশস্ত ও কমে যায় এতে করে নৌযটের সৃষ্টি হয়। পরে বাল্কহেডের ওজন কমিয়ে ছোট ছোট ভাড়ার নৌকায় মালামাল ওঠিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকা থেকে আবারও বাল্কহেডে মালামাল উঠানো হয়।
তানবির আহমেদসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানাযায়,পাটলাই নদী দিয়ে উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বড়ছড়া, চারাগাও ও বাগলী তিনটি শুল্ক ষ্টেশনের মাধ্যমে এলসি দিয়ে ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার কয়লা,চুনাপাথর আমদানী করা হয়। এর পর সেই কয়লা,চুনাপাথর,বালু ও নুড়িপাথর নারায়ণগঞ্জ,ভৈরব,কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম,কুমিল্লা,টাঙ্গাইল,যশোর,
খুলনা,দাউদকান্দি,বরিশাল,রংপুর,রাজশাহীসহ সারা দেশের বিভিন্ন ইট ভাটায় কয়লা ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে চুনাপাথর জোগান দেন স্থানীয় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীরা। এর পাশা পাশি সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ,নেত্রকোনা,কিশোরগঞ্জ,ভৈরব, কলমাকান্দাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে চাল,ডাল,আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পন্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম এই নদীপথ।
নৌজটে আটকে থাকা নৌকার মাঝি আলমগীর মিয়া বলেন,নৌজটের কারণে তারা ভয়ে রাত যাপন করেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় সুলেমানপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন নৌযান নিয়ে আটকেপড়া মালিক ও মাঝিরা।
তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সবুজ আলম জানান,প্রতি বছরেই এ নদী খননের কথা বলা হলেও বাস্থবে তা আর হয়নি। তিনটি শুল্ক বন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হয় কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোনো উন্নয়ন মুলক কাজ হচ্ছে না।
তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সভাপতি ও ব্যবসায়ী খসরুল আলম বলেন,নাব্য সংকটের কারনে ক্রেতাদের সময়মতো মালামাল দিতে না পারায় প্রতিবছর এই সময়টায় আমাদের ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়। প্রতিবছর নৌজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়৷ সরকার যদি নদীটি দ্রুত খননের পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আমাদের ভোগান্তি শেষ হবে।
তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান,নৌযানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারী রাখছি। নৌজান মালিক ও শ্রমিকরা একটু সহ্য করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলে আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।