দুই দশকেরও বেশী বাংলা মিডিয়ায় অবদান রাখায় লুৎফুন নাহার বেবী’র বিশেষ সম্মননা লাভ

অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে গত ৬ মার্চ সমপন্ন হয়েছে দর্শক নন্দিত টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ইউরোপের বার্ষিক প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৩। এনটিভি ইউরোপের হেড অফ কমিউনিকেশনস এন্ড কমপ্লাইনস আদনান পাভেল ও জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপিকা সেলিনা হায়দার এর প্রানবন্ত উপস্থানায় সম্মেলনে মোট ৭টি ক্যাটাগড়িতে বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখা কর্মকর্তাদের সম্মননা প্রদান করা হয়।

এসময় যুক্তরাজ্যর বাংলা মিডিয়ায় ২ দশকেরও বেশী সময় ধরে অবদান রাখায় এনটিভি ইউরোপের সিনিয়র এবং জনপ্রিয় সংবাদ পাঠিকা লুৎফুন নাহার বেবীকে বিশেষ সম্মাননা “ডেকেড অফ কন্ট্রিবিউশান টু বাংলা মিডিয়া পারসনালিটি এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে এনটিভি ইউরোপের সম্মানিত সিইও সাবরিনা হোসেন বলেন, মিডিয়া কর্মী হিসেবে লুৎফুন নাহার বেবী বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মিডিয়া সেক্টরের জন্য যে অবদান রেখেছে তা অভাবনীয় ও অকল্পনীয়। তার এ ঋণ এনটিভি সহ বৃটেনের কোন বাংলা চ্যানেল কখনো শোধ করতে পারবে না।

উল্লেখ্য লুৎফুন নাহার বেবী গত তিন বছর ধরে এনটিভি ইউরোপে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে যুক্ত আছেন। এর আগে ২০০২ সালে তিনি বিলেতের জনপ্রিয় চ্যানেল একুশে টিভিতে সংবাদ পাঠের জন্য বিলেতে আসেন, পরবর্তী তে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর একে একে বাংলাটিভি, চ্যানেল এস, এটিএন বাংলায় সাফল্যের সাথে সংবাদ পাঠ করেছেন তিনি। সংবাদ উপস্থাপনা ছাড়াও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে কন্ঠ দিয়ে নিজেকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যান বেবী।



শুধু তাই নয় বাংলাদেশে বিভিন্ন রাস্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ধারাবর্ননা সহ রেডিও টেলিভিশনে অসংখ্য বিজ্ঞাপনে কন্ঠ দিয়ে- কন্ঠ যে একটি শিল্প এবং জীবিকার উৎস হতে পারে তা তিনি প্রমান করেছেন।


এছাড়াও গুণী এই নারী বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল “আলিফ লায়লা”সহ বিভিন্ন নাটকে ডাবিং,বিভিন্ন ডকুমেন্ট্রিতে কন্ঠ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। বেবী এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমার সবচেয়ে ভালোলাগার কাজ ছিলো বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত আয়োজন “ যা কন্ঠরাজ মাজহারুল ইসলাম, কন্ঠরাজ নাজমুল হোসেইন , সাদেক হোসেন বাবুলের সঙ্গে যুগল কন্ঠে সেতু, শ্রুতি ভয়েজ সহ বিভিন্ন স্টুডিওতে রেকর্ড করা হতো, এর মধ্যে কিছু সংগীতমালার নাম আজ ও মনে পড়ে যেমন হেনোলাক্স সুরের পরশ, শরিফ মেলামাইন সংগীত মালা, মুন্নু সিরামিক, ব্ল ক্রস সহ অসংখ্য সংগীত মালা যা গ্রামে গঞ্জের প্রতিটি এলাকার শ্রোতাদের কাছে পৌছে যেত।

তাদের ভালোবাসায় পাঠানো চিঠির স্তুপের কথা মনে হলে আজও তিনি আবেগ প্রবন হয়ে পড়েন । এছাডাও বাংলাদেশে স্টেজে উপস্থাপনা করা, কবিতা আবৃত্তি করা ছিলো তার অনেক ভালো লাগার জায়গা।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কুইজ অনুস্টান “বলুন দেখি” উপস্থাপনার মাধ্যমে তার মিডিয়া জগতে যাত্রা শুরু হয়, এরপর আর থেমে থাকেন নি লুৎফুন নাহার বেবী। বাংলাদেশে জনপ্রিয় চ্যানেল”একুশে টিভির” সাথে শুরুথেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে “আপনারা দেখছেন একুশে টিভি“ এ ভয়েসটিও কিন্তু লুৎফুন নাহার বেবীর। যা এখনোও পর্যন্ত একুশে টিভি তাদের স্টেশন আইডি হিসেবে প্রতিদিন অন এয়ার হয়ে থাকে।

এদিকে এনটিভি ইউরোপ প্রসঙ্গে বেবী জানান, এনটিভি ইউরোপে কাজ করতে গিয়ে তিনি অভিভুত! এত ভলোলাগা আনন্দ ভালোবাসা সম্মান এখানে পেয়েছেন যা প্রকাশ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
এনটিভি ইউরোপের সম্মানিত সিইও সাবরিনা হোসেন, ডিরেক্টর মোস্তফা সারওয়ার বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া এই বিশেষ সম্মনান “ডেকেড অফ কন্ট্রিবিউশন টু বাংলা মিডিয়া পার্সনালিটি এওয়ার্ড” গ্রহন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বেবী। ভবিষৎতে এই ভালোবাসার মানুষদের কাছ থেকে হয়তো শেষ ফেয়ারওয়েল নিয়ে তাঁর এই মিডিয়ার বর্নাঢ্য কর্মজীবনের ইতি টানবেন।

ব্যাক্তিগত জীবনে দুই কন্যা সন্তান রাদিতা আদনিন ও আনিকা আমরিনের গর্বিত মা লুৎফুন নাহার বেবী, যারা তাকে সুখে-দুখে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে।

দীর্ঘদিন থেকে বেবী লন্ডনে অবস্থান করায় তিনি বাংলাদেশে মা,ভাই বোন সহ তাদের ছেলেমেয়েদের অনেক মিস করেন।

ছোট বেলায় তিনি বাবাকে হারিয়েছেন। মা খাদিজা ইসলাম শিক্ষকতা পেশায় থেকে বর্তমানে অবসরে আছেন। ৫ ভাই বোন স্ব স্ব পেশায় প্রতিষ্ঠিত ।

পরিশেষে লুৎফুন নাহার বেবী বৃটেনের বাংলা মিডিয়া এবং প্রতিটি টিভি চ্যানেলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার এই দীর্ঘ যাত্রায় সঙ্গী হবার জন্য। সবার প্রতি জানিয়েছেন শুভ কামনা।