ব্রিটিশরা কড়ি গুনছে আর আমরা গুনছি লাশ বললেন, ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি

ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে মিত্রদের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে যেতে হচ্ছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন দেশটির ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা। তবে তিনি ইউক্রেইনীয়দের সংগ্রামের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ব্রিটিশরা যখন ‘পয়সা গুনছে’, ইউক্রেইনীয়দের তখন ‘হতাহত গুনতে হচ্ছে’।
ইউক্রেইনের প্রতি সমর্থন জোরালো হলে সংকট ক্ষণস্থায়ী হবে, সানডে উইথ লরা কুজেনবার্গ অনুষ্ঠানে তিনি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। কিইভে রেকর্ড হওয়া সাক্ষাৎকারে এ ফার্স্ট লেডি জানান, যুদ্ধের মানবিক ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জেলেনস্কা জানান, তার সঙ্গে তার স্বামীর কালেভদ্রে দেখা হলেও প্রতিদিনই কথা হয়। ২০০৩ সালে ভলদোমির জেলেনস্কিকে বিয়ে করা জেলেনস্কা কিইভে-ই বিবিসির লরা কুজেনবার্গের সঙ্গে কথা বলেন। রোববার সম্প্রচারিত হতে যাওয়া ওই অনুষ্ঠানে জেলেনস্কার কাছে জ্বালানি-বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাওয়া ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তার বার্তা কী, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযান পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং মস্কোর নানান পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপীই জ্বালানি ও গ্যাসের দামে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। “আমি বুঝি যে পরিস্থিতি খুব্ই খারাপ। কিন্তু আমি মনে করিয়ে দিতে চাই কোভিড-১৯ মহামারীর কথা, মহামারী এখনও আছে, এর কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছিল, ইউক্রেইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। “জিনিসপত্রের দাম ইউক্রেইনেও চড়ছে। কিন্তু এর সঙ্গে আমাদের লোকজন মরছেও। তাই যখন আপনারা ব্যাংক হিসাব বা পকেটের টাকা গোনা শুরু করছেন বা হিসাব কষছেন, আমরাও একই কাজ করছি এবং সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা গুনছি,” বলেছেন ইউক্রেইনের ফার্স্ট লেডি।
গত মাসে কিইভ সফর করা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও ইউরোপজুড়ে মানুষজনের জীবনযাপনের খরচ বাড়বে বলে সতর্ক করার পাশাপাশি ইউক্রেইনে রাশিয়ার ‘আগ্রাসন’ মোকাবেলায় সহায়তা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছিলেন। চলতি বছর যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ৪২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে; দেশটির অর্থনীতিও অনেকখানি সংকুচিত হবে।
মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে জ্বালানি-বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এবং ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযান তাতে হাওয়া দিয়েছে, বলেছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানের পাল্টায় মস্কোর ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
যার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি সরবরাহকারী রাশিয়া গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ইউরোপীয় দেশগুলোর। রাশিয়ার গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়াতেই ইউরোপজুড়ে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম হু হু করে বাড়ছে।